লালকাঠ এক পায়ে দাঁড়িয়ে, আর তাকে দেখতে উঁকি মারেন এক বঙ্গসন্তান।আমেরিকায় প্রশান্ত মহাসাগরের উপকূলে লালকাঠের জঙ্গলের বর্তমান দেখে তাদের ভবিষ্যৎ নির্ণয়ে গবেষণা করছে বিজ্ঞানীদের একটি দল। যে গবেষণার রিপোর্ট জমা পড়বে হোয়াইট হাউসে। সেই গবেষকদের নেতৃত্ব দিচ্ছেন এক বঙ্গসন্তান। হুগলির চণ্ডীতলা থানা এলাকার বাকসার ভূমিপুত্র শুভম বন্দ্যোপাধ্যায়।পোশাকি নাম ‘কোস্ট রেডউড’। বাংলায় লালকাঠ। আমেরিকার পশ্চিম উপকূলে ক্যালিফোর্নিয়া থেকে কলোরাডো বা অরেগন জুড়ে রয়েছে এই রেড উডের জঙ্গল। যে গাছ পৃথিবীতে সবচেয়ে উঁচু। কিন্তু সেই লালকাঠ ‘বিপন্ন’। নেপথ্যে প্রাকৃতিক কারণ যেমন রয়েছে, তেমনই রয়েছে বৃক্ষচ্ছেদন। পরিবেশের বিষয়ে মনোযোগী আমেরিকার সরকার মরিয়া হয়ে চেষ্টা করছে লালকাঠ রক্ষা করতে। আমেরিকার সরকারি সংস্থা ‘ন্যাশনাল সায়েন্স ফাউন্ডেশন’ নিয়েছে ‘সেভ দ্য রেডউড’ প্রকল্প। সেই প্রকল্পে গবেষণাকারী দলেরই নেতৃত্ব দিচ্ছেন শুভম।
লালকাঠ প্রকাণ্ড। এক একটি গাছ ৩৮০ ফুট পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। গত ১৫ দিন ধরে প্রশান্ত মহাসাগরের উপকূলে ১২টি জঙ্গলে নমুনা সংগ্রহ করতে গিয়ে শুভমেরা খোঁজ পেয়েছেন এমন কয়েকটি লালকাঠের, যে গাছগুলির বয়স আনুমানিক ২০০০ বছর বা তারও বেশি। অনেক ঝড়, আগুন সামলে বেঁচে থাকে লালকাঠ।বেশি পরিমাণে ট্যানিন থাকায় বজ্রপাতের ফলে গাছের উপরের অংশ পুড়ে গেলেও মূল অংশ পৌঁছনোর আগেই আগুন নিভে যায়।
’’জঙ্গলে জঙ্গলে ঘুরে কেন জরিপ করলেন? শুভমের কথায়, ‘‘কোস্ট রেডউডের জঙ্গল সারা বিশ্বের অন্যতম ‘হেরিটেজ সাইট’। এখন গ্রিন হাউস গ্যাস সারা পৃথিবীর কাছে মাথাব্যথার কারণ। লালকাঠের জঙ্গল বিপুল পরিমাণে কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণ করে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় বিশাল অবদান রাখে। সেই প্রেক্ষাপটে আগামীর কথা মাথায় রেখেই এই কাজ।শুভমই জানাচ্ছেন, লালকাঠের বাণিজ্যিক মূল্যও প্রচুর। ফলে সরকারের ‘বিশেষ নজর’ রয়েছে। আসবাবপত্র তৈরিতেও কাজে লাগে এই কাঠ। রেডউডের ভবিষ্যৎ বিস্তার সম্পর্কে গাণিতিক মডেল তৈরি করার লক্ষ্যেই শুভমদের গবেষণা।