দেবীর বোধনের পর নদীতে ঘট ভরে এবং কলা বউকে সঙ্গে নিয়ে পুজো মন্ডপে আসার সময় শূন্যে ছোঁড়া হয় পাঁচ রাউন্ড গুলি। রীতিমতো সীমান্ত সুরক্ষা বাহিনী উপস্থিতিতে রায় বাড়ির এমন পুজোর প্রচলন দেখতে ভিড় করেন গ্রামবাসীরা। প্রায় ২২৪ বছরের পুরনো হবিবপুর ব্লকের তিলাসন গ্রামের রায় বাড়ির দুর্গা পুজোর আজও শতাব্দী প্রাচীন পুরনো সেই নিয়ম নিষ্ঠার সঙ্গে চলে আসছে। ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত ঘেঁষা রায় বাড়ির দুর্গা পুজো আজও এলাকার মানুষের মধ্যেই উৎসাহ ও উদ্দীপনা জাগিয়ে তোলে। দেবীর জন্য পুনর্ভবা নদী থেকে ঘটে জল ভরে এবং সপ্তমীর সকালে কলা বউকে স্নান করিয়ে পুজো মন্ডপে আসার সময় রায় বাড়ির সদস্যরা লাইসেন্স প্রাপ্ত বন্দুক থেকে শূন্যে পরপর পাঁচ রাউন্ড গুলি ছোঁড়ে । গুলির শব্দে রাস্তায় ভিড় করেন গ্রামবাসীরা। আর লাইসেন্স প্রাপ্ত বন্দুক থেকে গুলি ছোঁড়ার ক্ষেত্রে বিএসএফেরও অনুমতি নিতে হয়।
কথিত আছে, ১৯১৮ সালে রায় পরিবারের পূর্বপুরুষ শিবপ্রসাদ রায়ের হাত দিয়েই শুরু হয়েছিল দুর্গাপুজো। জমিদার পরিবার হিসাবে আজও পরিচিত রয়েছে রায় বাড়ি। সেই সময় এই জমিদার পরিবারের বিলাসবহুল জীবনযাত্রা নানান ব্যবসা-বাণিজ্য ও সাম্রাজ্যর চালানোর ক্ষেত্রেই পূর্বপুরুষ শিবপ্রসাদ রায় দেবী দুর্গার আরাধনায় মত্ত হন। তবে কি কারণে শূন্যে গুলি ছোঁড়ে সপ্তমীর সকালে কলা বউ স্নান করিয়ে ঘট ভরা হয়, তা আজও পরিষ্কার করে জানাতে পারেন নি রায় পরিবারের বর্তমান সদস্যরা। জমিদার বাড়ির পুজো মন্ডপে তৈরি হচ্ছে দেবী দুর্গা। ধুমধাম করে নবমী পর্যন্ত চলবে পুজো এবং ভোজনের আয়োজন। রায় পরিবারের স্থানীয় মৃৎশিল্পী দুর্গা প্রতিমাটি তৈরি করছেন।
বর্তমানে রায় পরিবারের পুজো উদ্যোক্তা রাকেশ কুমার রায় বলেন, প্রায় ২২৪ বছরের পুরনো রায় বাড়ির দুর্গা পুজো। মহালয়ার দিন থেকেই দেবীর আরাধনা শুরু হয়।
মূল পুজো আরম্ভ হয় ষষ্ঠীর সন্ধ্যায়। সপ্তমীর সকালে নাট মন্দির থেকে সামান্য দূরে পুনর্ভবা নদীতে ঘট ভরা হয় এবং কলা বউকে স্নান করানো হয়। এরপর পূজ মণ্ডপে ফেরার সময় আমি নিজে লাইসেন্স বন্দুক থেকে পাঁচ রাউন্ড শূন্যে গুলি ছুঁড়ি। এখন এই কর্মসূচির জন্য বিএসএফের অনুমতি নিতে হয়। আমরা বাবা ও ঠাকুরদাদার মুখেই শূন্যে গুলি ছোঁড়ার প্রচলনের কথা শুনে এসেছি। তাদের প্রয়াণের পর এখন আমরাই পূর্বপুরুষের এই স্মৃতি টিকিয়ে রেখেছি। তবে যতটুকু আমরা জানতে পেরেছি এলাকার শান্তি রক্ষা এবং পূর্বপুরুষদের স্মৃতির উদ্দেশ্যেই শূন্যে গুলি ছোঁড়ার প্রচলন রয়েছে। অষ্টমী এবং নবমীর দিন গ্রামবাসীদের ভোজনেরও আয়োজন করা হয়ে থাকে। দশমীর দিন পরিবারের রীতি মেনেই দেবী দুর্গার বিসর্জন দেওয়া হয়।