গুয়াহাটিতে গোলটেবিল বৈঠক: মেগা অয়েল প্ল্যান্টেশন ড্রাইভ

ন্যাশনাল মিশন অন এডিবল অয়েলস-অয়েল পাম-এর (এনএমইও-ওপি) আওতায় ভারত সরকার একটি ‘মেগা অয়েল প্ল্যান্টেশন ড্রাইভ’ শুরু করেছে ২৫ জুলাই থেকে ৫ অগাস্ট। এই উদোগের প্রারম্ভে গুয়াহাটিতে অনুষ্ঠিত হয়েছে একটি গোলটেবিল বৈঠক। বৈঠকে অংশগ্রহণ করে গোদরেজ অ্যাগ্রোভেট লিমিটেড, ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ অয়েল পাম রিসার্চ, দ্য সলভেন্ট এক্সট্রাক্টর্স অ্যাসোসিয়েশন অফ ইন্ডিয়া এবং সলিডারিডাড নেটওয়ার্ক। বৈঠকে আলোচনায় প্রাধান্য পায় উত্তরপূর্ব ভারতে পাম চাষের গুরুত্ব এবং এর দ্বারা কৃষকদের উপকৃত হওয়ার বিষয়টি।২০২১ সালের অগাস্টে ভারত সরকার ন্যাশনাল মিশন অন এডিবল অয়েলস–অয়েল পাম (এনএমইও-ওপি) গঠন করে। অয়েল পাম থেকে ভোজ্য তেল উৎপাদন বৃদ্ধির দিকে দৃষ্টি রাখার জন্য এনএমইও-ওপি হল একটি ‘সেন্ট্রালি স্পনসর্ড স্কিম’। এর ব্যয় ভাগ হবে এইভাবে – সাধারন রাজ্যের ক্ষেত্রে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের অংশ ৬০:৪০, উত্তরপূর্বের রাজ্যগুলিতে ৯০:১০ এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল ও কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলিতে ১০০%।পাম অয়েল আমদানির ক্ষেত্রে ভারত হল বিশ্বের বৃহত্তম দেশ এবং ব্যবহারের ক্ষেত্রে দ্বিতীয় বৃহত্তম দেশ। এদেশে উৎপাদন হয় ৩০০০০০ টন এবং বর্তমানে আমদানি করা হয় ৭৫০০০০০ টন। অয়েল পাম নিয়ে গবেষণার প্রয়োজনে ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ অয়েল পাম রিসার্চ (আইআইওপিআর) একটি নোডাল বডি হিসেবে কাজ করে। পাম অয়েল হল বিশ্বের সর্বাধিক উৎপাদিত তৈলশস্য। হেক্টর-প্রতি এর উৎপাদন ৫ থেকে ১০ গুণ বেশি, ফলে অন্যান্য ভেজিটেবল অয়েলের তুলনায় জমির সদ্ব্যবহার বেশিমাত্রায় হতে পারে।রাউন্ডটেবলের আলোচনায় বক্তারা সকলেই মতপ্রকাশ করে বলেছেন, এই অঞ্চলের রাজ্য সরকারগুলির উচিত অয়েল পাম চাষের জন্য উপযুক্ত পরিকাঠামো গঠন ও দ্রুত জমিবন্টন করা এবং তার ফলে স্বল্প পরিমাণ জমির মালিক এমন কৃষকদের উন্নতি ও সমৃদ্ধি ঘটবে।

গোদরেজ অ্যাগ্রোভেট লিমিটেডের ম্যানেজিং ডিরেক্টর বলরাম সিং যাদব বলেন, ভারতের পক্ষে এনএমইও-ওপি একটি সঠিক পদক্ষেপ। এটি গঠনের জন্য ও উত্তরপূর্বের রাজ্যগুলির জন্য বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণের কারণে সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, অয়েল পামের ব্যবসায় তিন দশকের বেশি অভিজ্ঞতা তাদের বিভিন্ন উৎসের সন্ধান দেওয়া ছাড়াও কৃষকদের অয়েল পাম প্ল্যান্টেশনের ব্যাপারে প্রশিক্ষণ প্রদানে সমর্থ করে তুলেছে। অন্ধ্রপ্রদেশ ও তেলেঙ্গানায় তাদের সাফল্য এর প্রমাণ। উল্লেখ্য, এই অঞ্চলে অয়েল পাম প্ল্যান্টেশনে ২০০৬ সাল থেকে নিয়োজিত গোদরেজ অ্যাগ্রোভেট লিমিটেড হল একমাত্র কোম্পানি যারা ২০১৪ সাল থেকে মিজোরামে একটি মিল চালাচ্ছে। এছাড়া, কোম্পানি আসাম, মণিপুর, অরুণাচল প্রদেশ ও ত্রিপুরা রাজ্য সরকারের সঙ্গে অয়েল পাম চাষের উন্নয়নের ব্যাপারে মউ স্বাক্ষর করেছে এনএমইও-ওপি স্কিমের অধীনে।

দ্য সলভেন্ট এক্সট্রাক্টর্স অ্যাসোসিয়েশন অফ ইন্ডিয়ার এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর ড. বি ভি মেহতা সাশ্রয়ী কুকিং অয়েল ও পুষ্টির উৎস হিসেবে পাম অয়েলের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, এর গুরুত্ব থাকলেও এদেশে চাহিদা ও সরবরাহে যথেষ্ট ফাঁক রয়েছে, ফলে বছরে বিভিন্ন রকমের ভোজ্য তেল প্রায় ১৪০ লক্ষ টন আমদানি করতে হয়। এজন্য আমদানি ক্ষেত্রে পাম অয়েল ও অন্যান্য তেলের জন্য ব্যয় হয় ১২০০০০ কোটি টাকা।আইসিএআর–আই আইওপিআর’এর ডিরেক্টর ড. কে সুরেশ বলেন, বর্তমানে উত্তরপূর্বাঞ্চলে ৩৮৯৯২ হেক্টর জমিতে অয়েল পাম চাষ হয়। এটা আরও বাড়ানোর সম্ভাবনা রয়েছে। আইসিএআর-আইআইওপিআর উত্তরপূর্বাঞ্চলে ক্যাপাসিটি বিল্ডিং প্রোগ্রাম, সীড গার্ডেন, প্ল্যান্টিং মেটেরিয়ালস, ডেমনস্ট্রেশন, ক্রিটিক্যাল ইনপুট সাপ্লাই, ইত্যাদির মাধ্যমে অয়েল পামের উন্নয়নে কাজ করে চলেছে।সলিডারিডাড নেটওয়ার্কের ভেজ অয়েল প্রোগ্রাম হেড-ইন্ডিয়া ড. সুরেশ মোতওয়ানি বলেন, সমীক্ষায় দেখা গেছে পাম অয়েল হল একটি দীর্ঘস্থায়ী ফসল। সঠিকভাবে চেষ্টা করলে পরিবেশ ও সামাজিক দায়িত্বের সঙ্গে অয়েল পাম প্ল্যান্টেশন পাম অয়েলের চাহিদা ও উৎপাদনের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করতে পারবে। ভারতে পাম অয়েল উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে ইন্ডিয়ান পাম অয়েল সাসটেইনাবিলিটি ফ্রেমওয়ার্ক (আইপিওএস) চালু করা হয়েছে, যা পাম অয়েল ইন্ডাস্ট্রিতে এক ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটাচ্ছে এবং পরিবেশ, স্থানীয় মানব গোষ্ঠী ও দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখছে।