সংখ্যা বাড়ছে, সেইসঙ্গে লড়াইও: কোভিডের পর পশ্চিমবঙ্গে শিশুপাচারের ঘটনা দ্বিগুণ হয়েছে

• গেমস২৪x৭ এবং কৈলাশ সত্যার্থী চিলড্রেন্স ফাউন্ডেশন দ্বারা সংকলিত ভারতে শিশুপাচার সংক্রান্ত রিপোর্ট থেকে জানা যাচ্ছে কোভিড-পরবর্তী পশ্চিমবঙ্গে শিশু পাচারের ঘটনা দ্বিগুণেরও বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে

• বিগত একদশকে, সরকার ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলি একটি সক্রিয় অবস্থান নিয়েছে, যার ফলে অভিযোগের সংখ্যা বেড়েছে, যদিও জনসচেতনতা বৃদ্ধি এখনও সমস্যাদীর্ণ।

• কার্যকরভাবে শিশু পাচার প্রতিরোধের জন্য দেশে একটি সামগ্রিক পাচার-বিরোধী আইন প্রণয়ন প্রয়োজন।

ভারতে শিশুপাচার সংক্রান্ত এক রিপোর্ট অনুসারে, কোভিড-পরবর্তী বছরগুলিতে (২০২১-২২) পশ্চিমবঙ্গে শিশুপাচারের গড় সংখ্যা কোভিড-পূর্ব বছরগুলির (২০১৬-২০২০) ৩৫ থেকে ৭২ হয়েছে অর্থাৎ তুলনামূলকভাবে দ্বিগুণেরও বেশি বেড়েছে। মহামারী-পরবর্তীকালে শিশুপাচারের ঘটনা বৃদ্ধিতে শীর্ষ দশের তালিকায় থাকা অন্যান্য রাজ্যগুলির মধ্যে রয়েছে উত্তরপ্রদেশ, বিহার, অন্ধ্রপ্রদেশ, কর্ণাটক, দিল্লি ও রাজস্থান। শিশুপাচার সংক্রান্ত এই তথ্য উঠে এসেছে গেমস২৪×৭ ও নোবেল শান্তি পুরস্কার জয়ী কৈলাশ সত্যার্থীর প্রতিষ্ঠিত কৈলাশ সত্যার্থী চিলড্রেন্স ফাউন্ডেশন (কেএসসিএফ) দ্বারা যৌথভাবে প্রকাশিত এক রিপোর্টে।

গেমস২৪x৭-এর ডেটা সায়েন্স টিম দ্বারা সংগৃহিত তথ্যের উৎস হল কেএসসিএফ ও তাদের সহযোগীদের ২০১৬ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে ভারতের ২১টি রাজ্যের ২৬২টি জেলায় শিশুপাচারের ক্ষেত্রে হস্তক্ষেপের ঘটনাকেন্দ্রিক। কেএসসিএফ ও সহযোগীদের হস্তক্ষেপে ২০১৬ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে ১৮ বছরের কমবয়সী মোট ১৩,৫৪৯ শিশুকে উদ্ধার করা হয়েছিল।

রিপোর্ট অনুসারে জানা যায়, ২০১৬ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে উদ্ধারীকৃত পাচার হওয়া শিশুদের ৮০ শতাংশই ১৩ থেকে ১৮ বছর বয়সী, উদ্ধার হওয়া শিশুদের ১৩ শতাংশ ৯ থেকে ১২ বছর বয়সী এবং ২.০৩ শতাংশ ৫ থেকে ৮ বছর বয়সী। আশ্চর্যের ব্যাপার, উদ্ধার হওয়া শিশুদের সংখ্যা কম হলেও একেবারে অস্তিত্ববিহীন নয়, তাদের বয়স ছিল পাঁচবছরেরও কম।

তাছাড়া, ওই রিপোর্টে দেশের শিশুশ্রমিকদের দুর্দশার কথা তুলে ধরা হয়েছে, বিভিন্ন শিল্পক্ষেত্রে তাদের নিযুক্ত থাকার কথাও উল্লেখ করা হয়েছে। রিপোর্টে বলা হয়েছে, যেসব শিল্পে সর্বাধিক সংখ্যক শিশুশ্রমিক নিয়োগ করা হয় সেগুলি হল হোটেল ও ধাবা (১৫.৬%), মম অ্যান্ড পপ অটোমোবাইল বা পরিবহন শিল্প (১৩%) ও গার্মেন্টস (১১.১৮%)।

দেশে শিশুপাচারের ক্রমবর্ধমান সংখ্যা প্রসঙ্গে কেএসসিএফ-এর ম্যানেজিং ডিরেক্টর এভিএসএম (অবসরপ্রাপ্ত) রিয়ার অ্যাডমিরাল রাহুল কুমার শ্রাওয়াত বলেন, “যদিও এই সংখ্যাগুলি গুরুতর ও উদ্বেগজনক বলে মনে হচ্ছে, তবুও এই সত্যটি অস্বীকার করার উপায় নেই যে গত একদশকে ভারত যেভাবে শিশুপাচার সংক্রান্ত সমস্যার মোকাবিলা করেছে তা এর মূল কারণটিকে অনেক শক্তি জুগিয়েছে ও গতিবৃদ্ধি করেছে। পাচারকারীদের ধরতে ও পাচার সম্পর্কে সচেতনতা প্রসারের জন্য কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকার এবং রেলওয়ে প্রোটেকশন ফোর্স, বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স ইত্যাদি আইন প্রয়োগকারী সংস্থার দ্রুত ও ঘন-ঘন হস্তক্ষেপের ফলে পাচারীকৃত শিশুদের সংখ্যা হ্রাস পেয়েছে এবং এই সংক্রান্ত মামলার সংখ্যাও লক্ষ্যণীয়ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। যাইহোক, এটি একটি কঠোর ও সুসংহত পাচার-বিরোধী আইনের সমর্থনপুষ্ট হওয়া প্রয়োজন, তাই আমাদের দাবি যে সংসদের এই অধিবেশনেই পাচার-বিরোধী বিলটি পাস করা হোক। আমাদের সন্তানরা বিপদের মধ্যে আছে এবং আমাদের হাতে নষ্ট করার মতো সময় নেই।” জরুরি ভিত্তিতে প্রযুক্তিচালিত হস্তক্ষেপের প্রতি গুরুত্ব আরোপ করে গেমস২৪x৭-এর কো-ফাউন্ডার ও কো-সিইও ত্রিবিক্রমণ থাম্পি বলেন, “চলতি বছরের শুরুতে আমরা আর্থিক সহায়তা ছাড়াও কেএসসিএফ-এর সঙ্গে আমাদের সহযোগিতা প্রসারিত করার অঙ্গীকার করেছিলাম এবং শিশু-উন্নয়নের জন্য স্থায়ী সমাধান তৈরি করতে ডেটা সায়েন্স ও অ্যানালিটিক্সে ক্ষমতাসম্পন্ন প্রযুক্তিগত নেতা হিসেবে গেমস২৪×৭-এর অনন্য অবস্থানকে কাজে লাগানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম। এই অঙ্গীকারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে এখানে উপস্থাপিত সুসংহত রিপোর্টটির উদ্দেশ্য হল কর্তৃপক্ষ ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলিকে শিশুপাচার মোকাবিলার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম ও উদ্যোশের বিকাশের জন্য ক্ষমতায়িত করা। এই রিপোর্টটি শুধুমাত্র ভবিষ্যতের সহযোগিতার জন্য মঞ্চ তৈরি করবে না বরং এমন একটি বিশ্বদর্শন তৈরি করবে যেখানে প্রযুক্তি একটি উচ্চতর উদ্দেশ্য পূরণ করবে – প্রতিটি শিশুর জন্য এক উজ্জ্বল ভবিষ্যতের প্রতিশ্রুতি, যা শেষাবধি এক নিরাপদ ভবিষ্যত রচনা করবে।