রান্না থেকে শুরু করে চা-কফি, ডায়াবেটিস রোগীরা কৃত্রিম চিনির ওপর নির্ভর করে। ডায়াবেটিস রোগীরা দোকান থেকে কৃত্রিম সুগার কিনে নেন যাতে রক্তে শর্করার মাত্রা না বাড়ে। কিন্তু সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে যে চিনির পরিবর্তে কৃত্রিম চিনি খাওয়া ভালো, তবে যদি এটি অতিরিক্ত পরিমাণে রক্ত প্রবাহে প্রবেশ করে তবে এটি উপকারের চেয়ে বেশি ক্ষতি করবে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা দাবি করেছে কৃত্রিম সুগার টাইপ ২ থেকে ডায়াবেটিস হতে পারে। শুধু তাই নয়, বেশি পরিমাণে রক্তে মিশে গেলে হৃদরোগের সম্ভাবনাও থাকে। মেডিকেল জার্নাল ‘দ্য ল্যানসেট’-এর গবেষণাও একই কথা বলে।
অনেকে মনে করেন চিনির পরিবর্তে কৃত্রিম চিনি খেলে শরীরে অতিরিক্ত ক্যালরির ভয় থাকে না। তাই ‘আর্টিফিশিয়াল সুইটনার’-এর জনপ্রিয়তা দিন দিন বাড়ছে। বাজারে বিভিন্ন ধরনের কৃত্রিম শর্করা পাওয়া যায়, যার মধ্যে সুক্রলোজ সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয়। বিজ্ঞানীদের দাবি, অল্প পরিমাণে কৃত্রিম চিনি খেলে তেমন ক্ষতি হয় না। কিন্তু সারাদিনে মুঠো মুঠো কৃত্রিম চিনি খেলে শরীরে খারাপ প্রভাব পড়ে। শুধু ডায়াবেটিস নয়, যারা ওজন কমাতে চান তারাও কৃত্রিম চিনি খাওয়া শুরু করেছেন। চা, কফি, সিরাপ সবতেই যোগ করছে কৃত্রিম চিনি। এ ছাড়া বাজারে যেসব ডায়েট ড্রিংক পাওয়া যায় তাতেও প্রচুর পরিমাণে কৃত্রিম চিনি থাকে, যা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। কৃত্রিম সুগার ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। এতে পুষ্টিরও অভাব রয়েছে। মূল উপাদানগুলো হলো- অ্যাসপার্টেম, সুক্রোজ়, সুক্রালোজ়, স্যাকারিন, নিওটেম এবং স্টিভিয়া। যেকোনো প্রক্রিয়াজাত খাবার, ডায়েট ড্রিংক, প্যাকেটজাত খাবারে কৃত্রিম সুগার থাকে। এখন দাম কমাতে কৃত্রিম চিনির সঙ্গে ভেজাল মেশানো হচ্ছে। দেখা গেছে, কৃত্রিম সুগার-এ সিলিকাসহ বিভিন্ন ক্ষতিকর উপাদান মেশানো হয়, যা শরীরে প্রবেশ করলে লিভার ও কিডনি রোগের ঝুঁকি বাড়ায়। তাই গবেষকরা পরামর্শ দেন, মিষ্টি কিছু খেতে চাইলে কৃত্রিম চিনি যুক্ত খাবারের পরিবর্তে ফল খাওয়াই ভালো।
কৃত্রিম সুগার নিয়মিত চিনির চেয়ে অনেক বেশি মিষ্টি হয়। কৃত্রিম সুগার-এ সুক্রলোজ থাকে, যা চিনির চেয়ে অনেক গুণ বেশি মিষ্টি। এই পদার্থ রক্তে মিশতে শুরু করলে ক্যান্সারের মতো মারণ রোগ হতে পারে। কৃত্রিম চিনি হৃদরোগ, মাইগ্রেন এবং এমনকি স্নায়ু রোগের কারণ হতে পারে। কৃত্রিম চিনি ত্বকেরও ক্ষতি করে। নিয়মিত সেবনে ত্বক ফর্সা হয়ে যায়। দুশ্চিন্তাও বাড়তে পারে। কৃত্রিম চিনি মস্তিষ্ক এবং স্নায়ুর উপরও বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। পুষ্টিবিদদেরও পরামর্শ, কৃত্রিম সুগারের বদলে গুড়, নারকেল চিনি খেতে পারেন। চিনিযুক্ত পানীয় বা মিষ্টির পরিবর্তে খেজুর খান। আয়রন, ফাইবার, পটাশিয়াম, কপার, ম্যাগনেসিয়াম এবং ভিটামিন বি৬ সমৃদ্ধ খেজুর শরীরের জন্য খুবই উপকারী। তা ছাড়া কিশমিশও খাওয়া যেতে পারে। কিশমিশে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, আয়রন, ক্যালসিয়াম এবং বোরন। যা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্যও উপকারী।