বিশ্বের সর্বত্র হাসপাতালগুলির জরুরি বিভাগে প্রতিদিনই সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত অবস্থায় ভর্তি হওয়া রোগীদের দেখা যায়। এইসব দুর্ঘটনা মারণ-আঘাত ও প্রাণহানির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। বিশ্ব স্বাস্থ্য তথ্য অনুসারে, সড়ক দুর্ঘটনায় প্রতি বছর ১.৩৫ মিলিয়ন মৃত্যু ঘটে থাকে, যার ফলে এটিকে বিশ্বের অন্যতম প্রধান মৃত্যুর কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। প্রতিটি দুর্ঘটনার জন্য অসংখ্য মানুষ গুরুতর আঘাত পায়, যার মধ্যে রয়েছে ট্রমাটিক ব্রেইন ইনজুরি, মেরুদণ্ডের ক্ষতি, অঙ্গহানি ও এমন মানসিক আঘাত যা বছরের পর বছর থেকে যেতে পারে।
সড়ক নিরাপত্তার জন্য জরুরি প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দিয়েছেন কলকাতার মেডিকা সুপার স্পেশালিটি হসপিটালের কনসালটেন্ট অর্থোপেডিক সার্জন ড. কৌস্তভ দেবনাথ। তিনি জানান, তিনি সরাসরি সড়ক দুর্ঘটনার ভয়াবহ পরিণতি দেখেছেন। সড়ক নিরাপত্তা শুধুমাত্র ট্রাফিক আইন অনুসরণের বিষয় নয় – এটি এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ জনস্বাস্থ্য সমস্যা যার প্রতি সমাজের প্রতিটি মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করা প্রয়োজন।
ভয়াবহ দুর্ঘটনার শিকার হয়েও যারা বেঁচে যান, তাদের সুস্থ করার জন্য প্রায়ই একাধিক সার্জারি, ফিজিক্যাল থেরাপি এবং মানসিক সমর্থন প্রয়োজন হয়। দুর্ঘটনার শিকার এবং তাদের পরিবারের উপর মানসিক প্রভাব গভীর ও দীর্ঘস্থায়ী হতে উঠতে পারে। ড. দেবনাথের চিকিৎসা করা রোগী নিজেদের আঘাত এড়িয়ে যেতে পারতেন যদি তারা সড়ক নিরাপত্তার ব্যাপারে আরও সচেতন থাকতেন। তাঁর কথায়, প্রতিরোধযোগ্য দুর্ঘটনার কারণে জীবন হারানো বা চিরতরে অন্যরকম হয়ে বেঁচে থাকা খুবই হৃদয়বিদারক ব্যাপার।
নিরাপদে চলাচলের জন্য সড়ক নিরাপত্তা সংক্রান্ত কয়েকটি পরামর্শ – (ক) নিরাপত্তা বেল্ট ও হেলমেট পরিধান করা, (খ) ট্রাফিক সিগন্যাল ও সাইন মেনে চলা, (গ) মদ্যপান করে ও অন্যমনস্কভাবে ড্রাইভিং না করা, (ঘ) মাত্রাতিরিক্ত বেগে গাড়ি না চালানো, (ঙ) হেলমেট ও প্রোটেক্টিভ গিয়ার ব্যবহার করা।
ড. কৌস্তভ দেবনাথ জানান, তাঁর ভূমিকা শুধু আঘাতের চিকিৎসায় শেষ হয় না। তিনি প্রতিরোধমূলক স্বাস্থ্যসেবার গুরুত্বে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন, যার মধ্যে রয়েছে সড়ক নিরাপত্তা সম্পর্কে জনসাধারণকে সচেতন করা। মানুষের শরীর ও সড়ক দুর্ঘটনা কিভাবে ক্ষতি করে তা বোঝার মাধ্যমে সকলেই সড়কে চলাচলের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকার জরুরি প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে আরও ভালভাবে বুঝে নিতে পারেন।